করোনা বিষয়ক তথ্যাবলী/ Information about Covid-19

করোনা ভাইরাস ডিজিজ নিয়ে 100% Authentic, Most Informative & Most Updated Article: COVID-19 সমগ্র (জনস্বার্থে লেখাটি অবশ্যই শেয়ার করুন)
লেখকঃ মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী
ফেসবুক আইডিঃ www.facebook.com/mushfiqueimtiaz
ফেসবুক পেইজঃ www.facebook.com/dr.michy
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস কী?
উত্তরঃ
০১) করোনা ভাইরাস এক ধরনের ছোঁয়াচে ভাইরাস যার অনেক প্রজাতির মধ্যে মাত্র ৭টি মানবদেহে সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে। উল্লেখ্য, এরা একই গোত্রের আলাদা আলাদা ভাইরাস যার কারণে এদের লক্ষণ একই ধরনের হলেও তীব্রতায় পার্থক্য রয়েছে।
ক) হালকা থেকে মাঝারি ফ্লুঃ Alpha Coronavirus (NL63 এবং 229E) & Beta Coronavirus (HKU1 ও OC43)
খ) প্রাণঘাতী রোগঃ Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS), Middle Eastern Respiratory Syndrome (MERS) & Coronavirus Disease (COVID-19)
০২) ১৯৬০ সালে করোনা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় তবে এই ভাইরাসের উৎস বা উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়নি। খালি চোখে সূর্য থেকে ছিটকে পড়া আলোকরশ্মির মতো এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে ক্রাউন বা মুকুটের মতো দেখতে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে 'Corona’ যার অর্থ ‘জ্যোতির্বলয়’।
০৩) বর্তমানে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসের নামঃ SARS coronavirus 2, or SARS-CoV-2
০৪) বর্তমানে সংক্রমিত করোনা ভাইরাস জনিত অসুখের নামঃ Corona Virus Disease 19 or COVID-19
০৫) সকল প্রজাতির করোনাভাইরাসে সাধারণত স্পাইক (এস), এনভেলপ (ই), মেমব্রেন (এম) এবং নিউক্লিওক্যাপসিড (এন) নামক চার ধরনের প্রেটিন দেখা যায়। ভাইরাসের উপরিভাগ এসব প্রোটিন দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক প্যাপিলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিনগুলোই সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে।
প্রশ্নঃ SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাসের প্রধান লক্ষণসমূহ কী কী?
উত্তরঃ SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস আচমকা মানবদেহে আক্রমণ করে। প্রধান লক্ষণসমূহ হলঃ
০১) ১ম লক্ষণঃ জ্বর ও ক্লান্তি (Fever & fatigue) যথাক্রমে ৮৭.৯% ও ৩৮.১% তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে ‘জ্বর’ নাও আসতে পারে
০২) পরবর্তী লক্ষণঃ শুষ্ক কাশি (Dry cough) ৬৭.৭% ও শ্লেষ্মা (Sputum) ৩৩.৪%
০৩) ১ সপ্তাহের মধ্যে সৃষ্ট লক্ষণঃ ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্ট (Shortness of breath) ১৮.৬%
০৪) অতঃপর, ফুসফুসের সংক্রমণজনিত ভিন্ন ধরনের বুক ব্যথা যেখানে গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়
০৫) অন্যান্য উপসর্গসমূহ কম দেখা গেছে যেমনঃ
ক) মাংসপেশী কিংবা অস্থিসন্ধির ব্যথা (Muscle pain or joint pain) ১৪.৮%
খ) গলাব্যথা (Sore throat) ১৩.৯%
গ) মাথাব্যথা (Headache) ১৩.৬%
ঘ) জ্বর সংশ্লিষ্ট কাঁপুনি (Chills) ১১.৪%
ঙ) বমিভাব ও বমি (Nausea or vomiting) ৫%
চ) হাঁচি (Sneezing), সর্দি (Runny nose) ৪.৮%
ছ) ডায়রিয়া (Diarrhea) ৩.৭%
ছ) রক্তকাশি (Haemoptysis) ০.৯%
জ) নেত্রবর্ত্মকলার জমাটবদ্ধতা (Conjunctival congestion) ০.৮%
ঝ) গন্ধহীনতা ও স্বাদহীনতা (Anosmia & Ageusia)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা বুঝতে পারেন না যে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত, নাকি সাধারণ সর্দি-কাশিতে।
০৬) তীব্রাবস্থার উপসর্গঃ
ক) ফুসফুসে সংক্রমণের তীব্রতা ও শ্বাসযন্ত্রের মর্মপীড়া (Respiratory distress/ARDS)
খ) নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যাওয়া (Pneumonia/Respiratory failure)
গ) পচন ও পচনজনিত শক (Sepsis & Septic Shock)
ঘ) কিডনী, হার্ট, লিভার বিকল হওয়া ও মৃত্যু (Kidney/heart/liver failure & death)
প্রশ্নঃ SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা কী?
উত্তরঃ
অধিকাংশ রোগীই ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। যারা মারা যান তারা সাথে সাথেই নয় বরং বেশ কিছুদিন ভুগে (গড়ে ১৪ দিন ও রেঞ্জ ৬ থেকে ৪১ দিন) তারপর মারা যান।
চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ক) উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা (Symptomatic treatment)
নতুন ভাইরাস বলে করোনা ভাইরাস নিরাময় বা নির্মূলের কোনো ফিক্সড বা সুনির্দিষ্ট ঔষধ কিংবা চিকিৎসা নেই। রোগীর মধ্যে যেই যেই উপসর্গ দেখা দেবে, সেই সেই উপসর্গ নিরাময়ের চিকিৎসা দেওয়া লাগবে। ফলে এটি অনির্দিষ্ট বা নন-স্পেসিফিক। তাই, একজন ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেকই উপসর্গভিত্তিক তথা সিম্পটোম্যাটিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, নিজে নিজে ফেসবুক বা গুগল সার্চ করে পাওয়া চিকিৎসা করা যাবে না তথা ভুল কিংবা বিপদজনক হবে।
০১) জ্বর হলে Napa or Napa Extra or Napa Extend or Napadol – কোনটা খাবেন জেনে নিন
ক) শুধুমাত্র জ্বর থাকলে এবং সজাগ থাকার প্রয়োজন না হলে Paracetamol 500mg (Napa) দিনে যতটুকু প্রয়োজন থেকে সর্বোচ্চ ৬ বার = ৩ গ্রাম ভরা পেটে খেতে পারবেন। এটি জ্বরের সবচেয়ে দ্রুত উপশম ঘটাবে।
খ) জ্বরের সাথে মাথাব্যথা থাকলে কিংবা সজাগ থাকার প্রয়োজন হলে/ঘুম না চাইলে Paracetamol + Caffeine 625mg (Napa Extra) সেবন করতে পারবেন। তবে যাদের উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের উচ্চগতির সমস্যা আছে, তারা এটি পরিহার করে Paracetamol 500mg (Napa) সেবন করবেন।
গ) Fast Release 31% + Slow Release 69% Paracetamol 665mg (Napa Extend) মূলত অস্টিওআর্থরাইটিস ও ব্যাক পেইনের ঔষধ। এটি জ্বর ও মাথা ব্যথার জন্য Napa 500mg or Napa Extra 625mg থেকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকরী। এক্সটেন্ড মানে এই বিশেষ ধরনের নাপা ধীরগতিতে দীর্ঘসময় কাজ করবে অথচ জ্বর নামাতে দ্রুতগতিতে কাজ করা আবশ্যক। ফলে জ্বর নামাতে Napa Extend 665mg ব্যবহার করার চেয়ে Napa 500mg or Napa Extra 625mg সেবন করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত।
ঘ) Paracetamol 375mg + Tramadol 37.5mg (Napadol) সেবন একদমই নিষিদ্ধ কেননা এর ভেতরে থাকা Tramadol উপাদানটি শ্বসনতন্ত্র নিস্তেজ (Respiratory Depression) করে দেয় আর করোনা ভাইরাস ডিজিজে শ্বসনতান্ত্রিক জটিলতাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে।
০২) শুষ্ক কাশি হলে Montelukast 5-10mg (Monas) দিনে ১ বার কিংবা Dextromethorphan HBr (Brofex) or Butamirate Citrate (Mirakof) ২ চামচ দিনে ৩-৪ বার ভরা পেটে সেবন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গরম পানিতে গোসল করা এবং Menthol, Eucalyptus মলম কিংবা লজেন্স চোষা গলায় জ্বালাপোড়া ও কাশির তীব্রতা কমাতে উপকারী।
০৩) নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচির সমস্যায় Fexofenadine 90-180mg (Fexo) দিনে ১ বার খাওয়া যেতে পারে।
০৪) Xylometazoline বা Antazol Drop করোনা ভাইরাস নিরাময় কিংবা প্রতিরোধে অক্ষম। এটি সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার্য নয় বলে এর রুটিন বা যে কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহারে নির্দেশনা অসঙ্গত।
ক) এটি নাক বন্ধের সমস্যায় ৩ থেকে বড় জোর ৭ দিন ব্যবহার করা যাবে, এর বেশি ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত। এটি নাকের ভেতরের রক্তনালিকাগুলোর সংকোচন ঘটিয়ে নাকের ভেতরে ফোলা ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার নিরাময় ঘটায়।
খ) এটি হাঁচি কিংবা নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যায় ব্যবহার করা যাবে না কেননা এটি নাকের ভেতরের ত্বকের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে হাঁচি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
০৫) বমি হলে কোন ধরনের বমিনাশক খাবেন জেনে নিন
ক) Cinnarizine 15mg (Cinaron) কিংবা Cinnarizine + Dimenhydrinate 20+40mg (Cinaron Plus) খাবেন, শিশুদের ক্ষেত্রে Phenadryl (Diphenhydramine) 2.5-5ml দিনে ৩-৪ বার খাওয়ানো যেতে পারে।
খ) Ondansetron 8mg (Emistat) or Palonosetron 0.5mg (Paloxi) সেবন করা উচিত হবে না কেননা এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিশেবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
০৬) ডায়রিয়া হলে Loperamide 2mg (Imotil) সেবন করা উচিত হবে না কেননা এটি শ্বসনতন্ত্র নিস্তেজ (Respiratory Depression) করে দেয় আর করোনা ভাইরাস ডিজিজে শ্বসনতান্ত্রিক জটিলতাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে। Bismuth Subsalicylate (Peptocid or Pink-Bismol) খাওয়া যাবে না কেননা এটি বমিভাব ও শ্বাসপ্রশ্বাসের উচ্চগতির সমস্যা সৃষ্টি করে। ডায়রিয়ার সমস্যায় শুধুমাত্র Orsaline (Oral Rehydration Salt) +/- Ferrous Sulphate + Folic Acid + Zinc (Zif) ও মল কঠিনকারক খাদ্যসমূহ যেমন কলা, ভাত, আপেলের সস, টোস্ট বিস্কুট কিংবা আলু খাবেন।
০৭) ভাইরাস নিরাময়কারী হিশেবে Hydroxychloroquine 200mg (Reconil/Roquin/Rheumaflex) +/- Azithromycin 500mg (Zimax) সম্পর্কে যা জানা যায়, তা হল -
ক) হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনের ভাইরাস প্রতিরোধী কিছু ভূমিকা রয়েছে বলে এটি পুরোপুরি না হলেও কিছুটা কিংবা অনেকটা কার্যকরী বলে অনুমান করা হয়। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো হচ্ছে হৃদযন্ত্রের নিলয়ের ছান্দনিক গতির অস্বাভাবিকতা (Ventricular Arrhythmia) । এছাড়া দৃষ্টিশক্তি হ্রাস (Retinal Damage) ও যকৃতের অকার্যকারিতা (Hepatic Impairment) দেখা দিতে পারে।
Both drugs have in-vitro activity against SARS-CoV, SARS-CoV-2, and other coronaviruses, with hydroxychloroquine having relatively higher potency against SARS-CoV-2 (অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যাপারে ঘটনা অন্য)
খ) অ্যাজিথ্রোমাইসিন একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়া মারে কিন্তু ভাইরাস মারতে পারে না। এদিকে করোনা জীবাণুটি একটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নয়। ফলে অ্যাজিথ্রোমাইসিন করোনা ভাইরাস মারতে অক্ষম। তবে ভাইরাসের তীব্র বা জটিল সংক্রমণে এর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াল সহ-সংক্রমণ (Co-infection) কিংবা আনুষঙ্গিক সংক্রমণ (Secondary Infection) ঘটতে পারে। সেজন্য এই বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইনের সাথে অ্যাজিথ্রোমাইসিন দেওয়া যেতে পারে।
In complicated or prolonged viral infections, bacteria may invade as well, and cause what is known as a “secondary bacterial infection”. In these cases, your doctor may prescribe an antibiotic, if one is needed, to kill the specific invading bacteria.
গ) অ্যাজিথোমাইসিন সেবনে ECG রিপোর্টে QT Wave Prolongation নামক অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে এবং এটি Ventricular Contraction বা হৃদপিণ্ডের নিলয়ের সংকোচনকেও কমিয়ে দিতে পারে।
ঘ) Azithromycin + Hydroxychloroquine উভয়ে একসাথে সেবনে হার্টের অসুখে ভোগা ব্যক্তিদের হৃদযন্ত্রের ছান্দনিক গতিতে ব্যাপক বাধা বা জটিলতার (Severe Cardiac Arrhythmia) সৃষ্টি হতে পারে।
০৮) নিম্নোক্ত অ্যান্টিভাইরাল ঔষধগুলো ব্যবহার করে মধ্যম থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে তবে এখনো তা পরীক্ষাধীন পর্যায়েই আছে (Investigational Drugs) তথা আন্তর্জাতিক মহলে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়নি বা এই ব্যাপারে অফিশিয়াল কোনো ঘোষণা আসেনিঃ
ক) Antivirals: Remdesivir, Favipiravir, Lopinavir/Ritonavir, Interferon, Ribavirin, Umifenovir, Rintatolimod, Azvudine, Danoprevir, Plitidepsin, Ifenprodil, Remestemcel-L, Brilacidin,
খ) TMPRSS2 Inhibitor: Camostat
গ) Anti-cytokine Storm: Hydroxy-Chloroquine, Toclizumab, Gimsilumab
ঘ) Others: Teicoplanin, Nitazoxanide, Anti-SARS-CoV-2 Polyclonal Hyperimmune Globulin, Vascular Leakage Therapy, Immunotherapy, Antibody-directed Therapy
০৯) ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট করোনা প্রতিরোধ কিংবা নিরাময় উভয় ক্ষেত্রেই অকার্যকর। সাপ্লিমেন্টের ওপর ভরসা না করে তরল ও পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে হবে।
ক) অপুষ্টি ও ডায়াবেটিসে ভোগী অল্প থেকে বেশি বয়সী রোগী এবং ক্রনিক অসুখগুলোতে তীব্রভাবে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের পুষ্টি বজায় রাখতে Ensure Normal/Plus/Diabetes, Pentasure Normal/DM, Revit-R or RN Diabetes ইত্যাদি পাউডার ড্রিংক পান করা যেতে পারে।
খ) WHO, CDC, NHS, BDA or IEDCR - কোথাও করোনা ভাইরাস নিরাময়ে ভিটামিন সি, ডি (BDA তে দেওয়া হয়েছে), জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এগুলো অহেতুক তথা অর্থের অপচয়। এসব সাপ্লিমেন্টের গল্পে বিভ্রান্ত না হয়ে উল্লেখিত পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ (Copper, Folate, Iron, Selenium, Zinc & Vitamins A, B6, B12, C and D) সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন আর করোনা ভাইরাস নিয়ে উপরিউক্ত সংস্থাগুলোর প্রতিরক্ষামূলক নির্দেশনা মেনে চলুন।
গ) ভিটামিন সি বা Ceevit/Vasco ২৫০-৫০০ মিগ্রা' কে তাত্ত্বিকভাবে উপকারী ধরা হলেও বাস্তবে এর উপকার পরিলক্ষিত হয়নি। এটি সাধারণ সর্দি জ্বর ও করোনা ভাইরাস উভয় ক্ষেত্রেই অকার্যকর বলে এটি কেনা অহেতুক অর্থের অপচয়। এটি না কিনে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে।
ঘ) সেলফ কোয়ার্যান্টাইনে থাকার কারণে এখন অনেকেই বাইরে তথা সূর্যালোকে যেতে ভয় পাবেন। সেজন্য ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবন করা যেতে পারে যার মাত্রা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০ মাইক্রোগ্রাম এবং ১ বছরের নীচের শিশুদের ক্ষেত্রে ৮.৫ থেকে ১০ মাইক্রোগ্রাম যদি তার পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ কিংবা ৫০০ মিলি এর ওপরে ফর্মুলা দুধ পান না করে। মার্জারিন, সিরিয়াল ও দইয়ে ভিটামিন ডি সংযোজিত করা থাকে আর ডিমের কুসুম, মাংস ও দুধে খুব সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে। সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকলেও বাংলাদেশে তা একদমই সহজলভ্য নয়।
১০) শ্বসনতন্ত্র ও মূত্রতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক তথা SARS-CoV-2 ভাইরাস সংক্রমণজনিত মৃত্যু এই ২ তন্ত্র থেকেই মূলত ঘটে বলে জ্বরের জন্য অ্যাসপিরিন কিংবা নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ (NSAIDS) ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে ইবুপ্রুফেন উচ্চ নয় বরং মৃদু প্রকৃতির NSAIDS বলে কেউ কেউ প্যারাসিটামলের পাশাপাশি এটিকেও জ্বর ও প্রদাহনাশক হিশেবে ব্যবহার করলেও করতে পারেন - এটি বিরল ক্ষেত্র ব্যতীত নিরাপদ।
১১) Acute Respiratory Distress Syndrome, Septic Shock & Exacerbation of Chronic Obstructive Pulmonary Disease ছাড়া Steroid/Methylprednisolone Injection দেওয়া উচিত হবে না কেননা ২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের করোনা ভাইরাস সংক্রমণে দেখা যায় - স্টেরয়েড ভাইরাস প্রতিলিপিকরণ তথা বংশবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছিল।
১২) রোগীকে অবশ্যই অন্যান্যদের থেকে আলাদা করে (Isolation) রাখতে হবে বা রোগী না হলে স্বেচ্ছা অন্তরণে (Self Quarantine) থাকতে হবে।
ডাক্তারদের জন্য চিকিৎসা প্রণালীর বিস্তারিত নির্দেশনাঃ এটি সাধারণ পাঠকের জানা আবশ্যক নয়।
সূত্রঃ
খ) প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা (Preventive measures)
০১) এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।
০২) অসুস্থ অবস্থায় বা ভাইরাসের নিরাময় আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত চীনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
০৩) সংশ্লিষ্ট অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে থাকা যাবে না এবং তাকে অবশ্যই আলাদা করে রাখতে হবে।
০৪) হাঁচি ও কাশি দিলে মুখমণ্ডল ও নাক টিস্যু দিয়ে ঢেকে অতঃপর হাঁচি ও কাশি দিতে হবে এবং টিস্যুটি তৎক্ষণাৎ ময়লার ঢাকনাযুক্ত বাক্সে ফেলে দিতে হবে। জনসমক্ষে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না।
০৫) অধোয়া হাত থেকে যেন জীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ ঘষা যাবে না।
০৬) বাইরে গেলে, অসুস্থ হয়ে থাকলে কিংবা অসুস্থ না হলেও অন্যের সংস্পর্শ এড়োতে মুখোশ পড়া বাঞ্ছনীয় এবং মুখোশে যেন হাতের স্পর্শ বেশি না পড়ে তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাইরে পরা ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে।
০৭) আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তো বটেই, হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। শ্বাসকষ্টের ভাইলযুক্ত ফেসমাস্কগুলো (N95 Respirator) উপকারী, কাগজের সার্জিক্যাল মাস্কগুলোর (Surgical Mask) উপকারী নয়। একটি দেশে যদি করোনা ভাইরাস মহামারী বা বড় আকার ধারণ না করে তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় এমন ব্যক্তির জন্য মাস্ক পরা অপ্রয়োজনীয়। মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা মূলত ৩ গ্রুপের ব্যক্তিদের -
ক) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি
খ) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা শুশ্রূষাকারী আত্মীয়স্বজন কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী
গ) করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণাকারী
০৮) চীন কিংবা দেশের বাইরে থেকে কেউ এলে ১৪ দিন দুই সপ্তাহ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া উচিত নয় এবং জ্বর, শুষ্ক কাশি ও ক্ষীণশ্বাস তথা রোগের উপসর্গগুলো অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
০৯) যেহেতু হাঁচি-কাশির ফোঁটাগুলো বাতাসে ভেসে অন্য মানুষকে স্পর্শ করে, তাই ঘনঘন হাত ধোয়াও কার্যকর হতে পারে।
উল্লেখ্য, Antiseptic Handwash আর Alcohol based Hand Rub or Hand Sanitizer এক কথা নয়। এদের কাজ আলাদা আলাদা।
ক) করোনা ভাইরাস ডিজিজ হচ্ছে ভাইরাসজনিত অসুখ আর অ্যান্টিসেপটিক হ্যান্ডওয়াশ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী। ফলে ভাইরাস নির্মূলে Chlorhexidine +/- Cetrmide or Chlorxylenol সমৃদ্ধ স্যাভলন, ডেটল, সেপনিল ইত্যাদি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হ্যান্ডওয়াশের কোনো ভূমিকাই নেই।
খ) সাধারণ সাবান চমৎকারভাবে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। এর হাইড্রোফোবিক অংশ ভাইরাসের লিপিড মেমব্রেনের সাথে যুক্ত হয়ে এই বলয় ভেঙ্গে ফেলে তথা ভাইরাস মারা যায়। হাতে 'দৃশ্যমান ময়লা' থাকলে সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া আবশ্যক। সাবান পানি সকলের ঘরেই লভ্য বলে এটি ১ম চয়েস। এমন সাবান কার্যকরী হবে যাতে –
০১) OH- বা হাইড্রক্সিল আয়ন বেশি তথা অধিকতর ক্ষারজাতীয় সাবান যা ভাইরাসরোধী যেমন কাপড় কাঁচার সাবান
০২) অধিকতর ক্রিমসমৃদ্ধ সাবান যা ভাইরাসের দুর্বলতম লিপিড মেমব্রেনের সাথে বিক্রিয়া করে একে ভেঙে ফেলতে সক্ষম যেমন Dove, Olay etc
০৩) গ্লিসারিন ভাইরাস প্রিজারভেশনে বহুল ব্যবহৃত বলে গ্লিসারিনযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না যেমন Pears, Cosco, Vivel, Dettol
০৪) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ভাইরাস মারতে অকার্যকর বলে এগুলো ব্যবহার করে লাভ নেই যেমন Savlon, Dettol ইত্যাদি
গ) এদিকে সাবান পানি না থাকলে কিংবা হাতে ‘দৃশ্যমান ময়লা’ না থাকলে ৬০-৯৫% অ্যালকোহল বিশিষ্ট (Isopropyl alcohol) অ্যান্টিভাইরাল হ্যান্ড রাব বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার কার্যকরী যেমন - Hexisol, Germisol, Handirub, Handiwash। এটি ২য় চয়েস। এসবের যে কোনোটি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোঁয়া উচিত এবং বাইরে থেকে আসার পর বা ঘরের কোনো ব্যক্তি ব্যতীত অন্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার পর হাত ধোয়া বাঞ্ছনীয়।
১০) নিম্নোক্ত অবস্থায় হাত ধোয়া বাঞ্ছনীয়ঃ
ক) হাতে দৃশ্যমান ময়লা থাকলে
খ) হাঁচি ও কাশি দেওয়ার পরে
গ) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা শুশ্রূষা করার পরে
ঘ) রান্না করার আগে, মধ্যে ও পরে
ঙ) খাওয়ার আগে
চ) মলমূত্র ত্যাগ করার পরে
ছ) পশুপাখিকে স্পর্শ করার পরে
জ) পশুপাখির বর্জ্য পরিষ্কার করার পরে
ঝ) বাইরে থেকে ফিরে এসে
ঞ) বিভিন্ন সরঞ্জাম বা খাদ্য দ্রব্য ধরার পরে যেমন মুঠোফোন, টিভির রিমোট, দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং, পানির কল, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, চাবি, টাকা, কাঁচা মাছ-মাংস, সবজি
সঠিক উপায়ে হাত ধোয়ার পদ্ধতি জেনে নিনঃ
ক) পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে দুই হাতের তুলে ভরে সাবান নিন ও এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের তালু ২০-৩০ সেকেন্ড ঘষুন। পানির কলেও সাবান ঘষে দিন।
খ) এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের উল্টো পিঠে এবং আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে ঘষুন।
গ) এক হাতের তালু আরেক হাতের তালুতে রেখে আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে ঘষুন।
ঘ) দুই হাতের আঙুলের পৃষ্ঠদেশ হাতের তালুর সঙ্গে ঘষুন।
ঙ) এক হাতের প্রতিটি আনুল এক এক করে অন্য হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘষুন।
চ) এক হাতের তালুতে অন্য হাতের আঙুলগুলোর মাথা ঘষুন।
ছ) পানি দিয়ে হাত ভাল করে ধুয়ে নিন এবং পাশাপাশি পানির কলও ধুয়ে নিন।
জ) অন্যের তোয়ালে ব্যবহার না করে শুধুমাত্র নিজের তোলায়ে দিয়ে হাত ভাল করে মুছুন।
১১) অসুস্থ জীবজন্তু থেকে দূরে থাকা ভাল। খামার, গোয়ালঘর কিংবা বাজারের মতো জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। পোষ্য প্রাণীদের সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। কোনো পশু স্পর্শ করার পর ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। অসুস্থ ও দীর্ঘ সময় ধরে মৃত জীবজন্তুর মাংস খাওয়া যাবে না।
১২) উচ্চ তাপমাত্রায় ও রোদে ভালোভাবে কাপড়, তোয়ালে, চাদর ইত্যাদি শুকিয়ে নিতে হবে।
১৩) কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে। মাংস ও ডিম খেতে বাধা নেই তবে উচ্চ তাপমাত্রায় ভালো করে সেদ্ধ ও রান্না করে খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
১৪) মানুষজনের বাইরে চলাচল সীমিত করে দেওয়া তথা ভিড় থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। ধোঁয়াটে এলাকা বা ধূমপান করা এড়িয়ে চলা উচিত। ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। সর্দি-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়া যাবে না।
১৫) অপুষ্টি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ নেন এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ফলমূল, শাকসবজী এবং তরল খাবার যেমন ফলের রস, স্যুপ এবং পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে হবে। রসুন ও থানকুনি পাতা এমনিতে খেলে ক্ষতি নেই কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে খাওয়া অর্থহীন কেননা উভয়ের কোনটিই করোনা ভাইরাস মারতে সক্ষম নয়।
যেসব খাবার পরিহার করা আবশ্যকঃ
ক) বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়েরঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় তথা ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়
খ) ঠাণ্ডা ও চিনিজাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, কার্বোনেটেড ড্রিংকসঃ ভাইরাসের বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তারে সাহায্য করে
১৬) ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করা ও ঘুমোনোর সময়ে এয়ার কন্ডিশনে না ঘুমিয়ে ফ্যানের বাতাসে ঘুমোনো বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা, অধিকাংশ ভাইরাস ঠাণ্ডায় অধিকতর শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ঠাণ্ডায় করোনা ভাইরাসের সাথে ব্যাকটেরিয়াল ঊর্ধ্ব ও নিম্ন শ্বসনতন্ত্রের সহ-সংক্রমণ (Co-Infection) ঘটতে পারে। করোনা ভাইরাসকে সিজনাল ভাইরাস না বলা হলেও ভাইরাসের কমন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যত উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বাড়বে (Hot Humid Weather or Summer/Rainy Season), তত করোনা ভাইরাসের শক্তি কমবে বলে গবেষণায় জানা গেছে।
তাই জ্বর দেখা দেয়া মাত্রই জ্বরের ওষুধ খান, যথাযথ বিশ্রাম নিন এবং WHO, CDC, NHS, IEDCR ও সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যতীত অপরিচিত বা সাধারণ ডাক্তার ও অ-ডাক্তার উভয়ের দেওয়া সকল প্রকার মতামত ও গুজব পরিহার করে চলুন।
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস নির্মূলে নয় বরং দেহের সামগ্রিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী কী খাওয়া যেতে পারে?
উত্তরঃ
০১) সবজিঃ করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপেল/লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি।
০২) শাকঃ যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।
০৩) ফলঃ কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।
০৪) মসলাঃ আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।
০৫) অন্যান্যঃ শিম বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা, বাদাম।
০৬) টক দই
০৭) চাঃ গ্রিন টি, লাল চা
০৮) ভিটামিন বি-৬, জিংক–জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি)
০৯) উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার (ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি)
১০) অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।
১১) অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা কী কী?
উত্তরঃ
বাংলাদেশ ও ভারতে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকেরই ডায়াবেটিস আছে। এই ডায়াবেটিসের রোগীদের বড় অংশের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগীদের যে কোনো জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার ডায়াবেটিসের জটিলতা হিশেবে রোগীদের অনেকেরই একই সঙ্গে ক্রনিক কিডনি রোগ ও হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি থাকে। ফলে করোনা ভাইরাস ডিজিজে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুঝুঁকি ডায়াবেটিসের রোগীদের।
০১) ডায়াবেটিস রোগীদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
০২) বর্তমান পরিস্থিতিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। ইনসুলিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম বলে মুখে সেবন করা ঔষধের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। খালি পেটে শর্করা ৬ মিলিমোলের কম আর খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে ৮ মিলিমোলের কম মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে।
০৩) করোনা উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে আলাদা রাখতে হবে। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
০৪) যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের কোয়ার্যান্টাইনে থাকা বাঞ্ছনীয়। বাজার, শপিং মল, জনবহুল জায়গা, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে থেকে করোনা প্রতিরোধের নির্দেশগুলো মেনে চলতে হবে। বাইরের কারও সঙ্গে হাত মেলানো যাবে না, কোলাকুলি করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে যে কারও থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্বে থাকতে হবে।
০৫) পার্কে বা বাইরে হাঁটতে যাওয়া যাবে না। শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাড়িতে, বারান্দায় বা করিডরে হাঁটতে হবে ও ব্যায়াম করতে হবে।
০৬) ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়াসহ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। টাকাপয়সা, খবরের কাগজ, পার্সেল ইত্যাদি জিনিস স্পর্শ করলে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
০৭) ঘরে কেউ অসুস্থ হলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে ফেলতে হবে। বাইরে থেকে আনা কোনো খাবার খাওয়া যাবে না।
প্রশ্নঃ SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোন ধরনের রোগীদের বেশি সতর্ক থাকা উচিত?
উত্তরঃ
ক) নিম্নোক্ত অসুখসমূহে রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পরে বা দুর্বল থাকে এবং/অথবা শ্বাসকষ্ট থাকে বলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ঝুঁকি কিংবা মৃত্যুহার বেশিঃ
০১) বহুমূত্র (Diabetes)
০২) উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
০৩) হৃদরোগ (Cardiovascular disease): Acute coronary syndrome, congestive heart failure, cardiac ischemia, cardiac tamponade, pulmonary hypertension
০৪) শ্বসনতন্ত্রের রোগ (Respiratory disease): asthma, pneumonia, interstitial lung disease, chronic obstructive pulmonary disease, interstitial lung disease, cystic fibrosis
০৫) অন্যান্যঃ Anemia, Organ Transplant, Pregnancy with heart disease, Blood or bone marrow cancer
ডাক্তার নয় এমন ব্যক্তিদের সহজে বোঝার নিমিত্তে এখানে সেই অসুখগুলোর তালিকা দেওয়া হল যাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা দিতে পারে
খ) যেসব ঔষধ গ্রহণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, সেসব ঔষধ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন
০১) হৃদরোগে ব্যবহৃত ঔষধঃ Adenosine, amiodarone, beta blockers
০২) ব্যথানাশক ঔষধঃ NSAIDs or Aspirin
০৩) ক্যান্সারে ব্যবহৃত ঔষধঃ Bleomycin, chlorambucil, cyclophosphamide, melphalan, methotrexate
০৪) মূত্রতন্ত্র সংক্রমণে ব্যবহৃত ঔষধঃ Nitrofurantoin
০৫) শ্বসনতন্ত্র অবসাদকারক ঔষধঃ Benzodiazepine (Diazepam, Clonazepam, Lorazepam, Flurazepam, Clobazam, Alprazolam) & Opioid (Oxycodone, Hydromorphone, Fentanyl, Pethidine, Morphine)
গ) যে সব ঔষধ কিডনীর জন্য ক্ষতিকর, সেসব ঔষধ গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন
০১) অ্যান্টিবায়োটিকঃ Aminoglycosides, cephalosporins, amphotericin B, bacitracin and vancomycin.
০২) উচ্চরক্তচাপ বিরোধী ঔষধঃ Ace inhibitors (Ramipril, captopril, enalapril, lisinopril, perindopril etc) & Angiotensin receptor blocker (Losartan, valsartan, candesartan, irbesartan, Olmesartan, telmisartan, azilsartan)
০৩) ক্যান্সারে ব্যবহৃত ঔষধঃ Cisplatin, carboplatin & methotrexate.
০৪) মেডিকেল ইমেজিংয়ে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থঃ Dyes (contrast media)
০৫) মাদকঃ Heroin & methamphetamine.
০৬) এইডসে ব্যবহৃত ঔষধঃ Indinavir, ritonavir, saquinavir.
০৭) ব্যথানাশক ঔষধঃ Ibuprofen, ketoprofen, naproxen or aspirin.
০৮) অ্যাসিডিটি প্রশমক ঔষধঃ Cimetidine.
০৯) অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থঃ Insecticides, herbicides & ethylene glycol
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ২৫% এর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যেতে হয়েছে।
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ টের পেলে করণীয় কী?
উত্তরঃ
০১) করোনা ভাইরাসের উপসর্গ টের পেলে একদমই দেরি না করে নিকটস্থ সরকারী হাসপাতালে যাবেন এবং ঢাকাস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IEDCR) এর ১০টি হটলাইনের যে কোনোটিতে যোগাযোগ করবেন। হটলাইনগুলো হচ্ছে: +8801944333222, +8801937000011, +8801937110011, +8801927711784, +8801927711785, +8801550064901-05
০২) আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখার স্বার্থে একা একটি আলাদা কক্ষে থাকুন ও সর্বাবস্থায় মাস্ক ব্যবহার করুন।
০৩) একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন ও সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে কমপক্ষে ১ মিটার বা ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন।
প্রশ্নঃ SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নির্ণয় করার পদ্ধতি কী?
উত্তরঃ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা একমাত্র ঢাকাস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IEDCR) এই হয়, অন্যত্র হয় না।
SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস নির্দিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়, যথা –
০১) মলিকিউলার টেস্টঃ সক্রিয় সংক্রমণের লক্ষণগুলি খুঁজে বের করতে। ৩ ধরনের পদ্ধতি রয়েছে -
ক) রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (RT-PCR assays) – সবচেয়ে কার্যকরী
খ) নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট (NAAT)
গ) হোল জিনোম সিকুয়েন্সিং (Whole Genome Sequencing)
এক্ষেত্রে শ্বসনতন্ত্রের নিম্নোক্ত এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় –
০১) Nasopharyngeal & Oropharyngeal Swab
০২) Bronchoalveolar Lavage
০৩) Endotracheal Aspirate
০৪) Nasopharyngeal Aspirate/Nasal Wash
০৫) Tissue from biopsy/autopsy including lung
০২) সেরোলজি (Antibody-assay/Immunoassay) টেস্টঃ এই পরীক্ষাটি নজরদারি করার উদ্দেশ্যে। এটি পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্ত করার জন্য করা হয়, যা একজন ব্যক্তির ভাইরাসের ধরন প্রকাশিত করে।
এক্ষেত্রে একাধিক নমুনা (Paired Sample) সংগ্রহ করা উত্তম –
ক) রোগ হওয়ার ১ সপ্তাহ পর (week 1 of illness)
খ) রোগের ১ম সপ্তাহের পর পুনরায় ৩-৪ সপ্তাহ পর (3-4 weeks later)
যদি একাধিক নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভবপর না হয় তবে
ক) উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৩-৪ সপ্তাহ পর (at least 3-4 weeks after onset of symptoms)
০৩) ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত সহায়ক তথ্যঃ
ক) লসিকাকোষের স্বল্পতা (Lymphocytopenia) ৮৩%
খ) অনুচক্রিকা স্বল্পতা (Thrombocytopenia) ৩৬%
গ) শ্বেত রক্তকণিকা স্বল্পতা (Leukocytopenia) ৩৪%
এদিকে এই রোগে নিউমোনিয়া হলে দেখা গেছে -
ক) শ্বেত রক্তকণিকার স্বল্পতা (Leukocytopenia) ৯-২৫%
খ) শ্বেত রক্তকণিকার আধিক্য (Leukocytosis) ২৪-৩০%
গ) লিভার এনজাইমগুলোর বৃদ্ধি (Elevation of AST/ALT) ৩৭%
ঘ) লসিকাকোষের স্বল্পতা (Lymphocytopenia) ৬৩%
০৪) চেস্ট সিটি স্ক্যান থেকে প্রাপ্ত সহায়ক তথ্যঃ
ক) যে কোনো সময়ঃ Bilateral ground-glass attenuation (patchy or diffuse)
খ) শেষের স্টেজেঃ Subpleural dominance, crazy paving and consolidations
সূত্রঃ
প্রশ্নঃ বাংলাদেশ তথা ৩য় বিশ্বের মানুষের জন্য করোনা ভাইরাস ডিজিজ কতটা ভয়ংকর হতে পারে?
উত্তরঃ সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ ও ৩য় বিশ্বের মানুষের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকির কারণ। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই মারা তো যাবেনই না বরং ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন। কারণ,
ক) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটিতে সাধারণ ফ্লু-জ্বরের মতো মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, তীব্র উপসর্গ দেখা দেয় না।
খ) বয়স্ক ও ক্রনিক ডিজিজে আক্রান্ত রোগী কিংবা যাঁদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম, তারা শতাংশ হিশেবে মোট রোগীর খুবই সামান্য অংশ।
তবে তাই বলে কি উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ নেই? – উত্তর হচ্ছে, উদ্বিগ্ন হওয়ার ব্যাপক কারণ রয়েছে। কারণ -
ক) ৩য় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের দারিদ্র্যপীড়িত বলে তাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার সমস্যাটি চরম।
খ) শিক্ষার অভাবে অধিকাংশ জনগণ বিজ্ঞানসম্মত ডায়েট সম্পর্কে অজ্ঞ কিংবা খাদ্যগ্রহণের নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে অসচেতন। ফলে এসব দেশের জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য দেশের জনগণের তুলনায় অনেক কম।
গ) ৩য় বিশ্বের ডাক্তার ও স্বাস্থ্য সেবার মান চরম অনুন্নত।
ফলে সতর্কতামূলক পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে এসব জনগণের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে,
০১) দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাবে (মূলত ফুসফুস ও কিডনী)
০২) নিউমোনিয়ার মাধ্যমে মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
০৩) খুব সম্ভবত মানুষের দেহকোষের ভেতরে ‘Mutation’ ঘটাতে সক্ষম অর্থাৎ নিজের গঠন পরিবর্তন করে দ্রুত নতুন রূপ নিতে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে যা আরো বেশি বিপদজনক।
০৪) এক একজন সংক্রমিত ব্যক্তি রোগটি কিছু ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন - এই সংখ্যাকে বলা হয় 'বেসিক রিপ্রোডাকশন নাম্বার অথবা মৌলিক প্রজনন সংখ্যা'- যা বর্তমানে ১.৪ থেকে ৩.৭ এর মধ্যে উঠানামা করছে এবং এটি ১ এর বেশি হওয়া মানে হল রোগটি স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে।
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস ডিজিজ নিয়ে কী উদ্বিগ্ন হওয়া তথা আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা কী অমূলক?
উত্তরঃ করোনা ভাইরাস ডিজিজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যার কারণে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। কারণ -
০১) করোনা ভাইরাসে ২৪ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত 408,913 জন আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে 107,073 (85%) জন সুস্থ হয়েছেন এবং 18,260 (15%) জন মারা গেছেন, 271,033 (96%) জনের সংক্রমণ হালকা ধরনের, 12,547 (4%) জনের অবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমানে 283,580 জন সংক্রমিত রয়েছেন এবং 125,333 টি কেস ক্লোজড কেস হিশেবে উল্লেখিত হয়েছে।
০২) শতাংশ হিশেবে মৃত্যুহার অনেক কম হলেও এক এক করে বিভিন্ন দেশে যেহেতু অসুখটি ছড়াচ্ছে, সেহেতু এই ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুহার উত্তরোত্তর বাড়বে। করোনা ভাইরাস গ্রুপের অন্য দুটি ভাইরাসের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ছিল –
ক) Middle Eastern Respiratory Syndrome: 34.4%
খ) Severe Acute Respiratory Syndrome 11%
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালে চীনের উহানে ১ম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খবর জানা যায়। সেক্ষেত্রে এই ভাইরাস সংক্রমণের মাত্র ৩ মাস ৯ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এই অল্প সময়ের Death Rate বা মৃত্যুহার দিয়ে কখনই এই রোগটির সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে উদ্বিগ্ন হওয়ার তথা আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
০৩) চীনের স্বাস্থ্যসেবা বাংলাদেশসহ ৩য় বিশ্বের দেশগুলো থেকে অনেক উন্নত। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় শাকসবজী বা হার্বস উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে বলে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ৩য় বিশ্বের অপুষ্টিতে ভোগা জনসাধারণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে বেশি। ফলে, চীনে যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩১৩৬ জন মারা যান, তবে ৩য় বিশ্বের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ ঘটলে আরো বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কথা। উল্লেখ্য, ইতালিতে গত ৯ই মার্চ ১ দিনে ১৩৩ জন মারা গেছেন। ফলে, বাংলাদেশীদের জন্য নিশ্চিতভাবেই করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
০৪) যেহেতু নিরাময় অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম এবং কার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি আর কার কম, তা যেহেতু আমাদের আগে থেকেই জানা থাকে না, সেহেতু স্বাস্থ্য সেবা উচ্চমানের কিংবা নিম্নমানের হোক, সংক্রমণ হার ও মৃত্যু হার বেশি কিংবা কম হোক, আগে থেকেই করোনা ভাইরাস নিয়ে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
০৫) বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, রক্তশূন্যতায় ভোগা ব্যক্তিদের এই রোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন জরুরী।
০৬) নবজাতক শিশুসহ সকল শিশুদেরই করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ঘটতে পারে তবে এই হার বয়স্কদের থেকে অনেক কম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপসর্গ মৃদু ধরনের থাকে ও ১-২ সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় ঘটে। ফলে, করোনা ভাইরাসে শিশুদের একদম কিছুই হয় না - এরকম বক্তব্য সঠিক নয়। তবে শিশু ও গর্ভাবস্থায় থাকা নারীদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম – এটি সত্য।
০৭) সাধারণত ভাইরাস কম তাপমাত্রার দেশগুলোতে কিংবা শীতকালে আক্রমণ করে। তার মানে এই নয় যে, এটি শুধুমাত্র কম তাপমাত্রার দেশগুলোতে কিংবা শুধুমাত্র শীতকালে আক্রমণ করে। যেমনঃ ইনফ্লুয়েঞ্জার অধিকাংশ সংক্রমণ শীতকালে হলেও অন্যান্য মাসেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে করোনা ভাইরাস শীতকালের পর দুর্বল হয়ে পড়বে এমন অনুমান যদি সঠিকও হয় তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। কথায় আছে – সাবধানের মার নেই।
প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যেই বিভিন্ন মিথ্যাচার অনলাইন ও বাস্তবে প্রচলিত আছে সেগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো কী কী?
উত্তরঃ
০১) করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ১০০% নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ৩টি স্বাস্থ্য সংস্থা Wolrd Health Organization (WHO), Center for disease control & prevention (CDC, USA), National Health Service (NHS, UK) ও বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IEDCR, BD) এর দেওয়া তথ্যের ওপর ভরসা রাখুনঃ
০২) বিশেষজ্ঞ নন এমন বাংলাদেশী ডাক্তার, বাংলাদেশী অজানা অচেনা পত্রপত্রিকার তথ্য, ফেসবুকের জনৈক ব্যক্তি কিংবা ধর্মগুরু, ধর্মীয় লেখক ও ওয়াজকারীদের দেওয়া তথ্য পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। এসবে হয় একদমই ভুল তথ্য রয়েছে নতুবা সঠিক তথ্যের পাশাপাশি বেশ কিছু ভুল তথ্যও রয়েছে যা আপনাদের সামনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একটি অসম্পূর্ণ তথা বিভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করবে। নামকরা বিদেশী পত্রিকা ও স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন যেমন BBC, CNN, Reuters, Washington Post, Newyork Times, Daily Mail ইত্যাদির প্রতিবেদন পড়তে পারেন তবে WHO, CDC, NHS এর চেয়ে অকাট্য তথা অথেনটিক তথ্য আর কোথাও পাবেন না। লক্ষ্য করুন -
ক) বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের ২০০০ ব্যাচের এমবিবিএস ডাঃ জাকির হোসাইন সবুজের ফেসবুক/ইউটিউব ভিডিওতে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি বেশ কিছু অপব্যাখ্যা ও অনুমান রয়েছে যা বিভ্রান্তিকর বলে বর্জনীয়। তার ভিডিওতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রতি তার বার বার আক্রমণের কারণ তিনি নিজে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে পারেননি এবং এই হতাশা তথা ক্ষোভ থেকে তিনি তাদের নামে মিথ্যাচার চালিয়েছেন।
খ) চিকিৎসাবিজ্ঞানে আরিফ আজাদের মতো কলাবিজ্ঞানী ধর্মীয় লেখকদের কিংবা মিজানুর রহমান আজহারী, গিয়াসুউদ্দীন তাহেরী, মফতী কাজী ইব্রাহীমদের মতো ধর্মগুরুদের ধর্মীয় গল্প তথা চাপাবাজির কোনো স্থান নেই বলে বর্জনীয়। এদের গ্রেফতার করা উচিত।
গ) ওজু করে করোনা ভাইরাস থেকে ন্যূনতম রক্ষা পাওয়া যাবে না। নবী মোহাম্মদের আমলে সাবান কিংবা হ্যান্ড রাব/স্যানিটাইজার ছিল না বিধায় এগুলো ওজুর অংশ নয়। WHO, CDC, NHS সহ কোনো স্বীকৃত স্বাস্থ্য সংস্থাই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শুধু পানি দিয়ে হাত পরিষ্কারের নির্দেশনা দেয়নি। শুধু পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করা তথা ওজু করা ১০০% অকার্যকরী। যেসব বাংলাদেশী ডাক্তার ওজুর গল্প করছেন, তাদের ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশী ডাক্তারগণের অধিকাংশই যে অযোগ্য, অদক্ষ তথা অনেকটাই অজ্ঞ বা স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন - এটি সকলেই জানেন।
ঘ) জাহাঙ্গীর কবিরের মতো ভুয়া উচ্চতর ডিগ্রিহীন প্রাইমারি কেয়ার ফিজিশিয়ানের 'কিটো ডায়েট' করতে গেলে করোনা ভাইরাসে মরতে হবে। কেননা, কিটো ডায়েট পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত করে শরীরকে চরমভাবে দুর্বল করে দেয় এবং এতে শরীরের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা কিটো ডায়েট ফলো করতে যেয়ে অন্যান্য রোগীদের চেয়ে আরো দ্রুত জটিলতার শিকার হবেন ও মারা যাবেন।
০৩) ঠাণ্ডা কিংবা গরম আবহাওয়া কিংবা গরম পানিতে গোসল করা শরীর থেকে করোনা ভাইরাসকে নির্মূল করতে পারে না কেননা প্রত্যেকটি কন্ডিশনেই সুস্থ মানুষের দেহের তাপমাত্রা থাকে ৩৬.৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উল্লেখ্য, অতিরিক্ত গোসল করা অপ্রয়োজনীয় আর অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
০৪) চীন বা অন্যান্য দেশ থেকে আসা চিঠি, পার্সেল, পণ্য কিংবা কাঁচামাল গ্রহণ করায় কোনো ঝুঁকি দেখা না গেলেও গবেষণা জানাচ্ছে এটি পলিপ্রপিলিন প্লাস্টিকে ৩ দিন, স্টেইনলেস স্টিলে ২-৩ দিন, কার্ডবোর্ডে ১ দিন, কপারে ৪ ঘণ্টা ও বাতাসে ৩ ঘণ্টা বাঁচতে পারে। তাই টেবিল, দরজার হাতল, লাইট-ফ্যানের সুইচ, বিভিন্ন জিনিশের হ্যান্ডল, ল্যান্ড ফোন ও মোবাইল, ডেস্ক, টয়লেট ও রান্না ঘরের সিংক ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে বা মুছে ফেলতে হবে। কেউ পরিষ্কারের জন্য ব্লিচ দ্রবণ মানাতে চাইলে ৫ টেবিল চামচ বা ১/৩ কাপ ব্লিচ প্রতি গ্যালন পানিতে মেশান কিংবা ৫ চা চামচ ব্লিচ প্রতি কোয়ার্ট পানিতে মেশান। তবে ব্লিচ কখনো অ্যামোনিয়া বা অন্য ডিজইনফেকট্যান্টের সাথে মেশাবেন না। এছাড়া ৭০% অ্যালকোহল দ্রবণও বিকল্প হিশেবে গ্রহণযোগ্য। উভয় দাবীই ভুলঃ
ক) কোনো সারফেসের ওপর বা যেকোনো জায়গার ওপর ভাইরাস এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
খ) কোনো কঠিন বস্তু থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ৭২ ঘণ্টা পর ব্যাপকভাবে কমে যায়।
০৫) মশার কামড়ে কিংবা খাদ্যের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে বিভিন্ন পশুপাখির মাংস ও ডিম খেতে কোনো বাধা নেই তবে এগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় তথা পরিপূর্ণভাবে রান্না করা বাঞ্ছনীয়।
০৬) হাত শুষ্ককারক যন্ত্রের উষ্ণ বাতাস কিংবা আল্ট্রাভায়োলেট স্টেরিলাইজেশন যন্ত্রের রশ্মি করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে পারে না। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির নিয়মিত বা লাগাতার ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।
০৭) থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে জ্বর আছে কী না, শুধু সেটিই যাচাই করা যায় কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারটি যাচাই করা যায় না কেননা সংক্রমণের ২-১৪ দিনের মধ্যে রোগীর দেহে জ্বর নাও আসতে পারে।
০৮) দেহে অ্যালকোহল কিংবা ক্লোরিন স্প্রে করা করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে তো পারেই না বরং এতে পোশাক ও চোখ, মুখের ক্ষতি হতে পারে। কোনো বস্তুতে স্প্রে করলে লাভ হতেও পারে, নাও পারে।
০৯) এখনো পর্যন্ত পোষা প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে সতর্কতা বজায় রাখতে পোষা প্রাণীকে ধরার পরে অবশ্যই সাবান-পানি কিংবা অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। এতে অন্তত ই কোলাই ও সালমোনেলা নামক ২টি ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষা মিলবে।
১০) নিউমোনিয়া কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন কিংবা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক করোনা ভাইরাস নির্মূল কিংবা প্রতিরোধে সম্পূর্ণই অকার্যকরী।
১১) স্যালাইন দিয়ে নাসারন্ধ্র পরিষ্কারে সাধারণ সর্দি-কাশিতে ভোগার সময়কাল কমিয়ে আনলেও করোনা ভাইরাস নির্মূল কিংবা প্রতিরোধে অকার্যকরী।
১২) টক ফল, পালংশাক, বাদাম, দই, আদা, রসুন, হলুদ, মৌরি, ব্রকোলি, মাশরুম ও জিনসেং - খাদ্যতালিকায় এসব খাদ্য বেশি করে রাখা যেতেই পারে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে তথা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়ত ভূমিকা রাখবে কিন্তু কোনোটিই করোনা ভাইরাস নির্মূলে কার্যকরী নয়।
১৩) বিষাক্ত ক্লোরিন ডাই অক্সাইড বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্লিচ পাউডার সেবন (Magic miracle supplement) কিংবা রূপার দ্রবণ (Colloidal silver) পান করা করোনা ভাইরাস নির্মূলে একেবারেই কার্যকরী নয়।
১৪) হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঘরে বসেই স্যানিটাইজার তৈরির যেসব প্রণালি ইন্টারনেটে ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো থেকে সাবধান। কোনো আসবাবপত্র বা টেবিল বা যেসব জিনিসে আপনি হাত দিচ্ছেন সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য মোছার যেসব বস্তু পাওয়া যায় সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
১৫) ১৫ মিনিট পরপর বা ঘন ঘন পানি কিংবা গরম পানি পান করা, আইসক্রিম পরিহার করা – কোনোটিই করোনা ভাইরাস নির্মূলে কার্যকরী নয়। যদি কারও মুখ দিয়ে ভাইরাস পেটে যায় তাহলে সেটি দু একটি নয়, লাখ লাখ ভাইরাস প্রবেশ করে। পানি পান করার সময় সামান্য পরিমাণ ভাইরাসই পাকস্থলীতে যাবে। তা ছাড়া শুধু মুখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে না। চোখ ও নাকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ঘনঘন পানি পান করে করোনাভাইরাস কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। বারবার গরম পানি পানে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর প্রদাহ ঘটতে পারে।
১৬) ভদকা, রাম, জিন, হুইস্কি, ব্র্যান্ডিতে অ্যালকোহলের পরিমাণ ৬০% বা তার চেয়ে কম বলে এসব মদ্য পানে কোনোভাবেই শরীর থেকে করোনা ভাইরাস নির্মূল হবে না। আর উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল পান করলে উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে।
১৭) বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি ১০ সেকেন্ড নিশ্বাস বন্ধ করে থাকে এবং ওই সময় যদি তিনি কোনো কষ্ট অনুভব না করেন, তাহলে বুঝতে হবে তার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস নেই। অর্থাৎ ফুসফুসের টিস্যু বা কলায় কোনো ক্ষতি হয়নি, বা স্বাভাবিকের তুলনায় মোটা হয়ে যায়নি। এর অর্থ হলো ফুসফুসে সংক্রমণ নেই। - এটি মিথ্যে দাবী কেননা ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়েছে কি না তা নিশ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষা করা যায় না এবং ফাইব্রোসিস করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নয়।
সূত্রঃ
প্রশ্নঃ SARS-CoV-2 কীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে?
উত্তরঃ নিম্নোক্ত উপায়ে রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণ ছাড়াও এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে –
০১) রেসপাইরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে
ক) শ্বাসনালীতে সংক্রমিত তরল কফ/কাশির মাধ্যমে
খ) সর্দি, হাঁচি কিংবা লালার তরল ফোঁটা/স্প্রে বাতাসে কিংবা মাটিতে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে
০২) সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক কিংবা সংক্রমিত কোন বস্তুর সাথে নাক বা মুখ একসঙ্গে স্পর্শ করা এবং বিরল ক্ষেত্রে, রোগীর মলমূত্র স্পর্শ করার মাধ্যমে
০৩) গবাদী পশু ও পাখির লোম ও মলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে তবে এখনো এমনটি বাস্তবে দেখা যায়নি
প্রশ্নঃ রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময়কাল কত?
উত্তরঃ
ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে গড়ে প্রায় ৫ দিন সময় লাগে তবে এর সময়সীমা ২-১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি ব্যক্তির গায়ে ২-১৪ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় (Incubation Period) থাকতে পারে। এই বিষয়টি ’ জানা ও বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ভাইরাস বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উপায় প্রবর্তন করতে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ আইসোলেশন ও কোয়ার্যান্টাইন কী ও এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তরঃ
১) আইসোলেশনঃ এর মাধ্যমে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখা হয়।
২) কোয়ার্যান্টাইনঃ এর মাধ্যমে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত নয় – এমন সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখা হয়, তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং সংস্পর্শে আসা সুস্থ ব্যক্তিরা ওই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় কী না তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
পার্থক্যঃ
১) আইসোলেশনে অসুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা রাখা হয় পক্ষান্তরে কোয়ার্যান্টাইনে অসুস্থদের সংস্পর্শে আসা সুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে না আসা সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখা হয়।
২) কোয়ার্যান্টাইনের কাজ হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা সুস্থ ব্যক্তিরা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় কী না তা পর্যবেক্ষণ করা এবং এরা যেন সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে না আসা সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রমিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। পক্ষান্তরে আইসোলেশনের কাজ হচ্ছে অসুস্থরা যেন অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রমিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
প্রশ্নঃ কীভাবে SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস পৃথিবীর কতিপয় রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে?
উত্তরঃ করোনা ভাইরাস ডিজিজ কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এসেছে কী না এ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
০১) মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
০২) কোনো বন্যপ্রাণী (Wild animals) কিংবা বেলুগা জাতীয় তিমি (Beluga whale) থেকে প্রথমে ভাইরাসটি কোনও মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
০৩) এর আগে ২০০২ সালে চীনে SARS ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে হর্সশু নামের এক প্রকার বাদুড় (Horseshoe Bats) এবং পরে খাটাশ বা গন্ধগোকুল (Civet Cats) থেকে মানুষের দেহে ঢোকার নজির রয়েছে। আর ২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্যে MERS ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট (Camel) থেকে।
০৪) উহান শহরের একটি বাজারে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী এবং মুরগি, বাদুড়, খরগোশ এবং সাপ বেচাকেনা হতো।
প্রশ্নঃ উহানে আটকে পড়া ৫০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা কী?
উত্তরঃ
চীনের উহানে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা যে কোনো জরুরী অবস্থায় সাহায্যের জন্য বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি হট লাইন নাম্বারে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এই হটলাইন নম্বর হচ্ছে- (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

© www.facebook.com/mushfiqueimtiaz

#Corona, #Novel_Corona, #Covid_19, #করোনা, #নোভেল_করোনা, #কোভিড_১৯, #করোনা_বিষয়ক_তথ্য #করোনা_মহামারী
#mushfiqueimtiaz #corona_guideline
#Corona_lineup #corona_Info #BD_Corona_Info #corona_virus #করোনা_ভাইরাস

Post a Comment

0 Comments